হত্যা নাকি আত্মঘাতী? সজীব মুন্সির মৃত্যু জেনো এক বিশাল রহস্য
প্রকাশিত: ২৮-৪-২০২৪ দুপুর ১:৩৭
শরীয়তপুরে জাজিরা উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নে অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বেপারী ও পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল জলিল মাদবরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর আহত যুবক সজীব মুন্সী(২৫) ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় (০১-এপ্রিল) মারা যায়। নিহত সজীব মুন্সী আব্দুল জলিল মাদবরের সমর্থক ছিলেন।
সেই ঘটনায় (০৫-এপ্রিল) ৬৫ জনের নাম উল্লেখপূর্বক ২০/২৫ জন অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তির বিরুদ্ধে জাজিরা থানায় ৪/৮২ নম্বরের একটি মামলা দায়ের করেন সজিব মুন্সির বড় ভাই সুমন মুন্সি(৩৩)। যেখানে বিলাসপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আ: কুদ্দুস বেপারীকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়াও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ফারুক হাওলাদারকেও আসামি করা হয়েছে। মামলার ৪৮ নং আসামি আলমগীর হাওলাদার এবং সন্দেহভাজন একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এই ঘটনার জেরে প্রতিনিয়ত প্রতিপক্ষের বাড়ি-ঘরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেই চলেছে বিলাসপুরে। গত (৮-এপ্রিল) দিবাগত রাতে তান্ডব চালানো হয় বিলাসপুর বাজারের কাছেই বসবাসকারী রহমান খানের বাড়িতে। বাড়িতে থাকা দুটি আধা পাকা ঘরের ভেতরে এবং বাহিরে কুপিয়ে ও ভাংচুর করে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেছে দূর্বৃত্তরা। এছাড়া লুটপাট ও ভাংচুর করা হয়েছে ঘরের মধ্যে থাকা আসবাবপত্র।
আবার (২০-এপ্রিল) শনিবার সন্ধ্যায় বিলাশপুরের চেরাগ আলী সরদার কান্দি গ্রামের জাকির সরদারের একটি পরিত্যক্ত লাকড়ির ঘরে কেরোসিন ছিটিয়ে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে দূর্বৃত্তরা। এই ঘটনায়ও ভুক্তভোগীরা অভিযোগ তুলেছেন, প্রতিপক্ষের আব্দুল জলিল মাদবরের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যান আ: কুদ্দুস বেপারির দাবি তার সমর্থকদের অন্তত শতাধিক ঘড়-বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়েছে।
এদিকে সজিব মুন্সি হত্যার শিকার হয়েছে নাকি আত্মঘাতী হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সজিব মুন্সি সংঘর্ষের সময় বোমা বহন করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষের লোকজনকে ধাওয়া দিতে গিয়ে রাস্তার পাশে পড়ে গিয়ে তার সাথে থাকা বোমা বিস্ফোরিত হয়ে তার পেটের নাড়ি-ভুঁড়ি বেরিয়ে আসে। এসময় শ্যামল নামের এক ব্যক্তি তাকে লক্ষ্য করে আরও একটি ককটেল নিক্ষেপ করেন বলেও শোনা যায়।
সজিব মুন্সির মৃত্যুর খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে দফায় দফায় ভাংচুর ও লুটপাট শুরু হয়। গত কয়েকদিনে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বেপারীর সমর্থক গিয়াস উদ্দিন মাদবর, ইব্রাহীম মাদবর, মামুন মাদবর, লোকমান মাদবর, রাজ্জাক মাদবর, লাল মিয়াসহ প্রায় শতাধিক লোকের ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে প্রতিপক্ষ আব্দুল জলিল মাদবরের সমর্থকরা। অভিযোগ রয়েছে, বাড়ি থেকে গরু-ছাগল ও গোলার ধান পর্যন্ত নিয়ে গেছে প্রতিপক্ষের লোকেরা। বুধবার (২৪-এপ্রিল) দুই গ্রুপের সংঘর্ষও ঘটে ফের।
বিলাশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুস বেপারী বলেন, বিলাশপুর ইউনিয়নে মোট ১৮টি গ্রামের মধ্যে ১২টি গ্রাম বর্তমানে পুরুষ শূন্য হয়ে গেছে। পবিত্র ইদুল ফিতর গেলেও এসব গ্রামে মহিলা ব্যতীত কোনো পুরুষই ছিলোনা। বর্তমানে বাড়ির মহিলারা যে কোনো দুর্ঘটনার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে। যেকোনো মুহুর্তে যেকোনো বাড়িতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটতে পারে। এছাড়া অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ঘটেছে ইতিমধ্যেই।
এ বিষয়ে আব্দুল জলিল মাদবর সকালের সময়কে জানান, আমার কোনো সমর্থক ভাংচুর ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত নয়, কিছু লোকজন পারিবারিক ক্ষোভ মিটাতে এই সমস্ত কাজ করে থাকতে পারে। তবে সজিব মুন্সিকে প্রতিপক্ষ পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করেও আত্মঘাতী বলে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়া প্রতিপক্ষ বিভিন্ন ধরনের মিথ্যাচার করার পাশাপাশি হাইকোর্ট থেকে জামিনে এসে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জাজিরা থানার পুলিশ উপ-পরিদর্শক (এসআই) নাজমুল বলেন, বিষয়টি যেহেতু তদন্তাধীন রয়েছে তাই আপাতত এই বিষয়ে তেমন কিছুই বলা যাচ্ছেনা। তবে প্রতিপক্ষের বাড়িতে হামলা - ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা প্রতিহত করার জন্য আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। পাশাপাশি আসামিদেরও ধরার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
জাজিরা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো: সুজন হক সজিব হত্যার শিকার নাকি আত্মঘাতী হয়ে মারা গেছেন সে বিষয়ে কোন কথা বলতে না চাইলেও প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটার বিষয়টি শিকার করে জানান- তারা এই বিষয়ে যথেষ্ট শক্ত অবস্থানে রয়েছেন এবং বিলাশপুরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করে নিয়মিত টহল অব্যাহত রেখেছেন।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান (পিপিএম) ছুটিতে থাকায় সার্বিক বিষয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ না বললেও সন্তোষজনক পরিস্থিতি রয়েছে দাবী করে বলেন, জাকির সরদারের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি তিনি এসে খতিয়ে দেখবেন। পাশাপাশি বিলাশপুরে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা প্রতিহত করতে যথেষ্ট পুলিশ মোতায়েন রয়েছে বলে জানান।